• বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৩ ১৪৩১

  • || ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সরকারের ওপর প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে স্পিক বাংলাদেশ ইয়ুথ

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দলসমূহের ওপর প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করা এবং জনগণ ও রাষ্ট্রের দেনাপাওনার সম্পর্কে সেতুবন্ধের ব্যবস্থার উদ্দেশ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল স্পিক বাংলাদেশ ইয়ুথ।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ রহমান, আকিদুল ইসলাম, নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী মাহির ইবনে ওমর, সাদমান সাকিব আদিব, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ জাইম খান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র চলে দলীয় নীতিতে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে ওদের নীতি অনুযায়ী সব কিছু চেঞ্জ হয়। সাধারণত যে কোনো সভ্য বা উন্নত দেশে এমন হওয়ার কথা না। ধরা যাক অ্যামেরিকার কথা; ওখানে রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেট যারাই ক্ষমতায় আসুক ওদের যুদ্ধ নীতি কিংবা মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক নীতি- কিছুটা ডেভিয়েট করলেও কোনো ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন আসে না। এর অনেক কারণ আছে। ওদের পলিটিকাল স্ট্রাকচার যথেষ্ট শক্তিশালী এটা একটা কারণ; আর তার চেয়েও বড় কারণ হচ্ছে ওদের জনগণের কণ্ঠস্বর আরও অনেক বেশি শক্তিশালী। জনগণ জানে যে তারা কী চায়, তাদের কী চাওয়া উচিত এবং সেটা তারা কীভাবে আদায় করে নিতে পারে। সরকার বা পলিটিকাল পার্টিগুলোর সঙ্গে পাওয়ার ডিসট্যান্স বেশ কম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা সরাসরি ইন্টার‍্যাক্ট করতে পারে। বাংলাদেশে আমরা উল্টো চিত্র দেখি। এখানে পাওয়ার ডিস্ট্যান্স অনেক বেশি এবং ভোটের মৌসুম ছাড়া জনগণের সাথে রাষ্ট্র বা রাজনীতির আহামরি ইন্টার‍্যাকশনের সুযোগ আসে না।

দেখা যায় একটা দল ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে গদিতে বসলেও দুই বছর পর যদি তারা একটা জনবিরোধী কাজ করে ফেলে তখন সেটা আটকানোর রাস্তা থাকে না। ফলে জনগণের ভয়েস সরকারের কাছে পৌঁছানোর একটাই উপায় লাঠিসোঁটা নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ো। আমাদের প্রিয় স্লোগান হচ্ছে লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই। অথচ রাষ্ট্র এটা বোঝে না যে লড়াই করে রক্ত ঝরানোটা সর্বশেষ পন্থা আজকের প্রজন্ম রক্তের আগে ঘাম এবং শ্রম দিয়ে ভাগ্য বদলাতে চায়। তারা বলেন, এই যে একটা বড় গ্যাপ, এটা ব্রিজ করার দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন কিংবা সিভিল সোসাইটির। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি প্রো-পিপল না। গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি যে এই সিভিল সোসাইটির একটা বড় অংশ চাটুকারিতায় ব্যস্ত। যারা নেক নিয়ত নিয়ে এখানে আসেন, তারাও আসলে নিজস্ব বাবল ভেঙে বাইরে তাকাতে পারেন না। দেখা যায়, একজন বড় মাপের বুদ্ধিজীবী হয়ত বক্তৃতা করছেন অথচ তার ভাষার সঙ্গে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্পর্ক নেই বললেই চলে।

এ সমস্যা সমাধানের চিন্তা থেকেই আমরা ভাবলাম যে এমন একটা নাগরিক সংগঠন বা সিভিল সোসাইটি তৈরি উদ্যোগ নিই, যারা এলিট ইকো চেম্বারে আবদ্ধ থাকবে না বরং জনমানুষের সত্যিকারের প্রতিনিধি হয়ে উঠবে। তাদের ভয়েসকে অ্যামপ্লিফাই করবে, তাদের চাওয়াকে এমপাওয়ার করবে। আইডিয়াটা আমাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো এবং এটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করতে বসে গেলাম। তখন আমাদের কাছে আরেকটা জরুরি জিনিস ধরা পড়ল সেটা হচ্ছে সিভিল সোসাইটিতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ একেবারেই সীমিত। অথচ বাংলাদেশের তরুণরা গণআন্দোলন থেকে শুরু করে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা সব কিছুতেই কিন্তু নিজেদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন; এবং নিশ্চিতভাবেই পূর্ববর্তী প্রজন্মকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পটেনশিয়াল তাদের আছে। ফলে এই অমিত সম্ভাবনাময় তারুণ্যকে দূরে রেখে সিভিল সোসাইটি কোনোভাবেই ফাংশন করতে পারে না।

দেশব্যাপী এক সর্বাত্মক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। অনেকে এটাকে বলছেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি প্রথম স্বাধীনতাটাই যথাযথ ভাবে নিজের করে নিতে পেরেছিলাম? আমরা কি একটা বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছিলাম কোনোদিনও?

এই গণঅভ্যুত্থানকে গণবিপ্লবে পরিণত করতে হলে আমাদের প্রয়োজন রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। সিস্টেম একই রেখে যদি আমরা স্রেফ চালক পরিবর্তন করি তাহলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্পিরিট ব্যাহত হবে। ফলে আমাদের লক্ষ্য এখন এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা যার ভিত্তি হবে ইনসাফ, সুশাসন এবং জবাবদিহি। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলেই জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটবে এবং সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জিত হবে যা আমাদের চূড়ান্ত চাওয়া। সহজ কথায় আমাদের ভিশন হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের জন্য অর্থবহ স্বাধীনতা নিয়ে আসা; যে স্বাধীনতা শুধু পাঠ্যবইয়ের পাতায় নয়, বরং জনগণের হৃদয়ে বিরাজ করবে।

সামনের দিনে আমরা এমন এক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই যেখানে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে না। বিনা বিচারে গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর আটকে রাখা, গুম কিংবা অপহরণ, অথবা ক্যাঙ্গারু কোর্টের রায়ে কারো জীবন শেষ হয়ে যাবে না। আমরা চাই সমতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটা দেশ। একদিকে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কারো বাবার ভাস্কর্য নির্মাণ হচ্ছে আর অন্যদিকে ভাতের অভাবে সন্তান বিক্রি করে দিচ্ছেন হতভাগ্য বাবা; এমন অমানবিক দৃশ্য আর আমাদের চোখে পড়বে না এটাই আমাদের চাওয়া।  

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –